আপনার ব্র্যান্ডকে শুধু ‘চোখে’ পড়লে হবে না, ‘মনেও’ পড়তে হবে – একমাত্র Content-এর সাহায্যেই তা সম্ভব

আপনি কে?

কেউ যদি আপনাকে এই প্রশ্নটি করে, আপনি কিভাবে এর উত্তর দেবেন? আপনি আপনার নাম বলতে পারেন, কোথায় কাজ করেন, designation কি, কি ভালোবাসেন ইত্যাদি বলবেন। তাইতো? অতএব আপনার একটা পরিচয় আছে, যে পরিচয়ের মাধ্যমে আর ৫টা লোক আপনাকে আপনিই হিসেবে আলাদা করে চিনে নিতে পারে।

একই ভাবে, আপনার ব্যবসার, আপনার কোম্পানির, আপনার এজেন্সির-ও একটা পরিচয় আছে। সমস্যা হল, আপনার কোম্পানি নিজে থেকে তার পরিচয় দিতে পারে না। তার জন্য কাৰ্ড ছাপাতে হয়, বিজ্ঞাপন দিতে হয়, আর বানাতে হয় ওয়েবসাইট। কিন্তু এইগুলো বানিয়ে, যা হোক কিছু একটা লিখে দিলেই কি কাজ শেষ? না! আপনার ব্র্যান্ডের-ও একটা unique পরিচয় বানাতে হবে – যে পরিচয় তাকে আর ৫টা ব্র্যান্ড থেকে আলাদা করবে। প্রত্যেক কোম্পানির একটা নির্দিষ্ট কালচার থাকে, একটা ভিশন থাকে। এই কালচার এবং ভিশন ব্র্যান্ডটির পরিচয় গড়ে তোলে। এবং ঠিক এখানেই দরকার পড়ে কন্টেন্টের।

আজকালকার এই opinionistic পৃথিবীতে আপনি আপনার ব্র্যান্ডকে কি ভাবে position করছেন তার ওপর আপনার ব্যবসার সাফল্য দারুণ ভাবে নির্ভর করে। কন্টেন্টের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই আজ Brand Positioning হয়ে থাকে। এই কন্টেন্ট ওয়েবসাইট কনটেন্ট হতে পারে, প্রেস রিলিজ হতে পারে, কিংবা খবরের কাগজের ভিতরের ফ্লায়ার হতে পারে – আবার ইনস্টাগ্রাম ভিডিও-ও হতে পারে।

একটা সময়ে খবরের কাগজ, টিভি, রেডিও, হোর্ডিঙে বিজ্ঞাপন দিলেই মোটামোটি এই ব্র্যান্ড পজিশনিং হয়ে যেত।

কিন্তু আজ এই প্রতিযোগিতার যুগে আপনার ব্র্যান্ডকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখে মানুষ মনে রাখবে না। মানুষ কতটা relate করতে পারছে আপানার ব্র্যান্ডের সাথে - এটির ওপর আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের গ্রহণযোগ্যতা ভীষনরকম ভাবে নির্ভর করছে।

আপনাকে তাই সোশ্যাল মিডিয়া আর আপনার ওয়েবসাইট- দুটোর কনটেন্ট-এর ওপর জোর দিতেই হবে। এক মাত্র এই দুটো মাধ্যমের সাহায্যেই আপনার কোম্পানির নাম মানুষের অবচেতন মনকে স্পর্শ করতে পারবে।

আপনার ব্র্যান্ডের “Why” সম্পর্কে কতজন কাস্টমারের ধারণা আছে?

আমরা সাধারণত আমাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস মার্কেটিং করার সময় দুটো জিনিসের দিকে মন দিই – প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটা কি, এবং ঠিক কি ভাবে আমাদের এই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস একজন কাস্টমারকে সাহায্য করবে। কিন্তু সাইমন সিনেক – বিশ্ববিখ্যাত, মার্কেটর, লেখক, এবং মোটিভেশনাল স্পিকার – বলছেন, “না, এইভাবে কাস্টমারের মনের কোণে আপনার ব্র্যান্ড ঘর বাঁধতে পারবে না!”

সিনেক তার বই – Start With Why-তে বলছেন আপনি এবং আপনার কোম্পানি যে কাজটা করছেন সেটা কেন করছেন – এইটার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। As a business leader, আপনার স্বপ্ন কি? আপনি কেন এই কাজটা করছেন? আমরা যারা যে ব্যবসাই করি – শুধুমাত্র টাকা উপার্জন করার জন্য করি না। ব্যবসার সাথে জড়িত প্রত্যেক মানুষের একটা philosophy আছে, sentiment আছে – যার সূত্র ধরেই শুরু হয় ব্র্যান্ডের পথ চলা। আর এই সেন্টিমেন্টটাই আমাদের ব্র্যান্ডের “Why”।

আপনার কন্টেন্টের মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ডের “Why” সম্পর্কে মানুষ যত জানতে পারবে, আপনার ব্র্যান্ড তত শুধু চোখেই পড়বে না, বার বার মনেও পড়বে। বাকি সব কোম্পানিগুলো যখন শুধুই নিজেদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের কথা (what), কি ভাবে সেগুলো কাজ করে (how)- এই সব বলতেই ব্যস্ত থাকে, তখন আপনার কোম্পানি একদম ট্রান্সপারেন্ট ভাবে নিজের “Why” তার কাস্টমারের কাছে যদি তুলে ধরতে পারে, তাহলে আপনি ব্র্যান্ডের একনিষ্ট ক্রেতাদের (brand loyalists) এক বিরাট সেনা খাড়া করতে পারবেন।

বোরোলিন কোম্পানির ‘Why’

আমরা বোরোলিনকে “সুরভিত এন্টিসেপটিক ক্রিম” হিসেবে চিনলেও, আমাদের মনের গভীরে খুঁজে দেখলে বুঝতে পারি যে এই ক্রিম আসলে বাঙালিত্বের প্রতীক।

স্বাধীনতার আগে, ব্রিটিশ সরকার যখন বাংলা তথা ভারতকে আর্থিক দিক থেকে পঙ্গু করে দিয়েছিল, সেই সময় দাঁড়িয়ে একজন বাঙালি entreprenur - গৌর মোহন দত্তের উত্থান কোনো বিপ্লবের তুলনায় কম ছিল না। গৌর বাবুর নিয়ে আসা এই ক্রিমকে আপামর বাঙালি তথা ভারতবাসী নিজের করে নিয়েছিল।

বোরোলিনের “Why”টি ছিল ব্রিটিশ সামগ্রীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সমস্ত বাঙালির হাতে ১০০% বাংলার এক প্রোডাক্ট তুলে দেওয়া। ঋতুপর্ণ ঘোষের দেওয়া tagline – “বঙ্গজীবনের অঙ্গ” তাই বোরোলিনের ক্ষেত্রে একেবারে মানানসই।

কিভাবে বোরোলিন নিজের “Why”কে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে

বোরোলিনের সেই ৯৪ বছরের “Why” আজও বেঁচে আছে কোম্পানিটির Facebook পোস্ট আর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। আপনি একবার ওদের Facebook পেজ থেকে ঘুরে আসুন। খেয়াল করবেন কোম্পানিটি নিজেদেরকে এন্টিসেপটিক বা বিউটি ক্রিমের নির্মাতা হিসেবে তুলে ধরে না। বরং ওদের CSR ক্রিয়াকলাপগুলোকেই তুলে ধরা হয় ফেসবুক পেজে। আজ বোরোলিন নিজেকে দেশের ভালো, দশের ভালো করে যাওয়া কোম্পানি হিসেবেই নিজের “Why”-কে তুলে ধরে রেখেছে। এবার একবার বোরোলিনের Facebook পেজের সাথে Pond’s-এর Facebook পেজের তুলনা করুন। আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখতে পাবেন। Pond’s-এর “Why” হল নিজেকে female beauty care ব্র্যাণ্ডের authority হিসেবে গড়ে তোলা। তাই কোম্পানিটি নিজেদের ১৫০ বছরের ইতিহাসের কথা বার বার তুলে ধরে তাদের কন্টেন্টের মাধ্যমে।

 

ভারতের সমস্ত সফল কোম্পানিগুলোর সাফল্যের পিছনে তাদের “Why”-কে তুলে ধরার ক্ষমতা এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমুল। আমুলের Why নিজেকে The Taste of India হিসেবে গড়ে তোলা। কোম্পানিটির সমস্ত কন্টেন্টে এই “Why”টি ফুটে ওঠে।

আপনার কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ডকে ঠিক কি চোখে দেখছে - এটাকে আপনি কন্টেন্টের সাহায্যে Influence করতে পারবেন

গতবছর পুজোতে YouTube-এ খাদিমস একটা বিজ্ঞাপন চালিয়েছিল, যেখানে একটি ছেলেকে যখন তার বান্ধবী বলছে যে চল খাদিমস থেকে পুজোতে ঘোরার জুতোর শপিং করি, তখন ছেলেটি বলছে “না আমার স্কুল সু লাগবে না।” শেষে ছেলেটি যখন খাদিমস-এর শোরুমে ঢোকে, সে বলে ওঠে “খাদিমস এত পাল্টে গেছে!”

বাংলার অনেক কাস্টমারই খাদিমসকে পুরোনো দিনের জুতো কোম্পানি ভাবে। কোম্পানিটি কাস্টমার-এর এই ধারণাকে পাল্টাবার জন্য তাদের content strategyর আমূল পরিবর্তন করে। এখন খাদিমস নিজের “Wowness”-কে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে আর সফলও হচ্ছে।

২০০১ সালে খাদিমস নিজেকে এই ভাবে উপস্থাপন করত –

তারা নিজেদের বর্ণনা এই ভাবে দিত- Khadim’s is the brand that has transcended the myriad barriers of taste, language as well as diverse regional preferences.

আর আজ খাদিমস নিজেকে এইভাবে উপস্থাপন করে –

আজ তাদের hashtag – It’s Wow, It’s Khadim

শুধুমাত্র ওই 4 শব্দের hashtag দিয়েই কোম্পানিটি নিজের সেই “Classic” ভাবমূর্তি ত্যাগ করে আধুনিক হয়ে উঠতে পেরেছে।

কন্টেন্ট আপনার ব্র্যান্ডকে নতুন কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিতেও সাহায্য করে - দরকার পড়ে SEO Optimised Content-এর

কন্টেন্টের সাহায্যে আপনার ব্র্যান্ডের শুধু গ্রহণযোগ্যতাই বাড়ে না, বাড়ে তার reach- আরও বেশি বেশি মানুষ আপনার ব্র্যান্ডের অস্তিত্ব জানতে পারে, আপনার প্রোডাক্টের অস্তিত্ব জানতে পারে। In fact, আপনার ব্র্যান্ডকে হয়তো মানুষ আগে থেকেই চেনে, কিন্তু আপনার নতুন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের অস্তিত্ব সম্পর্কে আপনার কাস্টমার কিছুই জানে না। এক্ষেত্রেও কনটেন্ট দারুন ভাবে কাজে লাগে।

কন্টেন্ট কিভাবে একটা কোম্পানিকে নতুন ক্লায়েন্ট পেতে সাহায্য করে

একটা কাজ করুন – Google-এ গিয়ে লিখুন “Content Writing companies in Kolkata”।

দেখবেন প্রথম পেজেই আমাদের ব্র্যান্ড – Dimensions Content Writing Services-এর নাম রয়েছে। শুধু ওয়েবসাইটের সার্চ রেজাল্টের লিস্টেই না, আমাদের ব্র্যান্ডের নাম Google-এর business listingএও দেখতে পাবেন।

Semrush-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যেক মাসে অন্তত ১৪০ জন Content Writing companies in Kolkata – এই কীওয়ার্ডটি লিখে সার্চ গুগল সার্চ করেন। এই ১৪০ জনের মধ্যে যদি মাত্র ৫%-ই আমাদের ক্লায়েন্ট হয়ে যায় তাতেই আমাদের যথেষ্ট revenue generate হবে। এবং হয়ও।

Note: আমাদের একটা সুবিধা হল, একমাত্র সেই সব মানুষরাই ওই কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করেন, যাঁরা আগে থেকেই Sales Funnel-এর মাঝামাঝি থাকেন।

কন্টেন্টের মাধ্যমে Sales Funnel-এর মধ্যে নেই – এমন সম্ভাব্য কাস্টমারদের আকর্ষণ করা কি সম্ভব?

১০০% সম্ভব! কোনো সম্ভাব্য কাস্টমার যখন “Current tax slab” লিখে গুগল-এ সার্চ করে, তিনি অবশ্যই Cleartax-এর blog প্রথম পেজেই দেখতে পাবেন। হয়ত সেই সম্ভাব্য কাস্টমারটি এই প্রথম Cleartax-এর নাম জানতে পারলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজভাবে tax জমা দেওয়া যায় কিংবা accountant hire করা যায়। অর্থাৎ তিনি ওই কোম্পানিটির Sales funnel-এর প্রথম স্টেজ-এ পৌঁছে গেলেন।

আপনার ওয়েবসাইটের কনটেন্ট-টিই যাতে গুগল সার্চের প্রথম পেজে দেখা যায় তার জন্য কন্টেন্টটিকে এবং আপনার ওয়েবসাইটটিকে SEO Optimised করতে হয়। এটা কিভাবে করে, সেটা লিখতে গেলে একটা পৃথক প্রবন্ধের দরকার পড়বে। এই বিষয়টির গভীরে আপাতত তাই গেলাম না।

সব শেষে যেটা বলার…

আপনার কাস্টমার-ও মানুষ

আপনার ব্র্যান্ডের পিছনে যিনি বা যাঁরা আছেন (অর্থাৎ আপনি) তাঁরাও মানুষ

কন্টেন্টের সাহায্যে আপনার কোম্পানিকে করে তুলুন ‘অযান্ত্রিক’

Author:

This Content Has Been Written By a Human Being
No AI Used

This Content Has Been Written By a Human Being
No AI Used!